কীভাবে শুরু হবে নতুন নিয়োগ? বেতন ফেরত কাদের দিতে হবে? SSC মামলার রায় নিয়ে সব প্রশ্নের উত্তর জেনে নিন
২০১৬ সালে এসএসসি (WBSSC) তে যে নিয়োগ হয়েছিল সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court) সেই নিয়োগ বাতিল বলে ঘোষণা করেছে। সেই সঙ্গে গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি, নবম-দশম, একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষকদের সকলের চাকরি বাতিল করা হয়েছে। বাতিল করা এই চাকরির সংখ্যা হলো ২৫ হাজার ৭৫৩।
আদালতের রায় প্রকাশের পরপরই একাধিক জনের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তবে একাধিক চাকরিপ্রার্থী পুনরায় নিয়োগের দাবিতে গান্ধী মূর্তি ও মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির সামনে টানা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এই নির্দেশের সঙ্গে সঙ্গে একাধিক জনের মধ্যে অনেক প্রশ্ন করতে দেখা গিয়েছে।
১) হাইকোর্ট কী নির্দেশ দিয়েছে?
কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) তরফ থেকে এই নিয়োগ দুর্নীতির মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। আদালত জানিয়েছে ২০১৬ সালের সমস্ত নিয়োগই বাতিল করা হয়েছে। যারা চাকরি পেয়েছিল তাদের সকলকে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে বার্ষিক ১২ শতাংশ সুদ সহ সমস্ত টাকা ফেরত দিতে হবে। জেলা শাসকরা ৬ সপ্তাহের মধ্যে সেই টাকা উদ্ধার করবে। আর এই নিয়োগ দুর্নীতির সমস্ত তদন্ত করবে সিবিআই (CBI)। প্রত্যেকটি প্রার্থীর ওএমআর সিটের (OMR Sheet) কপি আদালতে জমা করতে হবে আর এই কপিগুলোর মূল্যায়ন করবে নতুন কোন সংস্থা।
২) বাতিল করা চাকরির সংখ্যা কত?
গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি, নবম-দশম একাদশ-দ্বাদশ সব মিলিয়ে মোট শূন্য পদ ছিল ২৪ হাজার ৬৪০ টি। বোর্ডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ওই সময় নিয়োগপত্রে নাম এসেছিল মোট ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের। তবে তার মধ্যে সকলে চাকরিতে নিয়োগ করেনি। তাই চাকরি বাতিলের সংখ্যাটা প্রায় ২২ হাজার জনের মত হবে।
৩) বেতনের টাকা কাদের ফেরত দিতে হবে?
কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)-এর নির্দেশ অনুসারে যারা বেআইনিভাবে চাকরি পেয়েছিল, বহির্ভূত প্যানেল ও ফাঁকা ওএমআর সিট (OMR Sheet) জমা দেওয়ার পরেও চাকরি পেয়েছিল তাদের চাকরির সমস্ত টাকা ফেরত দিতে হবে। আগামী ৪ সপ্তাহের মধ্যে এই টাকা তারা ফেরত দেবে বার্ষিক ১২ শতাংশ সুদ সহ।
৪) যোগ্য প্রার্থীদের মধ্যে যাদের চাকরি বাতিল করা হয়েছে তাদের কী হবে?
যারা যোগ্য হওয়ার পরেও তাদের চাকরি বাতিল করা হয়েছে তাদের জন্য আলাদাভাবে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। ভোট শেষ হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে নতুন করে ওএমআর শিট (OMR Sheet) চেক করতে হবে। তারপর সেই ভিত্তিতে একটি নতুন প্যানেল তৈরি করা হবে। যারা যোগ্য প্রার্থী তারা এই প্যানেল অনুযায়ী পুনরায় চাকরি পাবে।
পরবর্তীতে কীভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া হবে?
২০১৬ সালে এসএসসি (SSC) পরীক্ষা দেওয়া সকল প্রার্থীদের ওএমআর শীট(OMR Sheet) পুনর্মূল্যায়ন করা হবে। তবে নতুন করে এই পুনর্মূল্যায়নের দায়িত্ব দেওয়া হবে নতুন কোনো সংস্থাকে।
কীভাবে নিয়োগ করা হবে সুপার নিউমেরারি পদে?
এই পদের তদন্ত করবে সিবিআই (CBI)। আর নিয়োগের দায়িত্বে রয়েছে ক্যাবিনেট। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা তাদের তদন্তের জন্য যাকে ইচ্ছা ডাকতে পারে। সে মন্ত্রী আমলা হলেও তাদেরকেও ডাকা হবে। আদালতের তরফ থেকে তদন্তকারী সংস্থাকে জানানো হয়েছে আগামী তিন মাসের মধ্যে রিপোর্ট জমা করতে হবে।
সুপ্রিম কোর্টে মামলা করা যাবে কিনা?
যারা যোগ্য হওয়ার পরেও নিজেদের চাকরি হারিয়েছে তারা ইচ্ছা করলে সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) মামলা দায়ের করতে পারে। আবার অযোগ্য প্রার্থীরা সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) মামলা দায়ের করতে পারবেন এই মর্মে যে এতদিন তারা যে শ্রম দিয়েছিল তার পরেও কেন তাদের সমস্ত বেতন ফেরত দিতে হবে? মামলাকারীদের তরফ থেকে ক্যাভিয়েট দখলের সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যেই নেওয়া হয়েছে।
কোন বিষয়গুলির ওপর ভিত্তি করে আদালত এই নির্দেশিকা জারি করেছে?
কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)-এর অন্যতম আইনজীবী যিনি এই দুর্নীতি মামলার সঙ্গে যুক্ত তার মতে তিনটি বিষয়কে সামনে রেখে এই মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। সেই বিষয়গুলো হলো নিম্নরূপ-
প্রথমত, যারা দুর্নীতি করে চাকরি পেয়েছিল তাদের সুদ সমেত সমস্ত বেতনের টাকা পরিশোধ করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, ২০১৬ সালে এসে সেই নিয়োগের তালিকায় কারা যোগ্য ভাবে আর কারা অযোগ্য ভাবে চাকরি পেয়েছিল তাদের সংখ্যাটা আলাদা করতে পারেনি রাজ্য সরকার (State Govt.) বা এস এস সি (SSC) তাই আদালত পুরো প্যানেল বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছে।
তৃতীয়ত, আগামী তিন মাসের মধ্যে নায়িকা বাদে অন্য কোন নতুন সংস্থা এ নিয়োগ প্রক্রিয়ার দায়িত্ব নিবে।
চতুর্থত, সিবিআই (CBI) কে এই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, ক্যাটাগরিতে শূন্য পদের থেকেও নিয়োগ পত্রের সংখ্যা কিভাবে বেশি?
২০১৬ সালের যে নিয়োগ হয়েছিল ২০২৪ সালের নিয়োগে বয়স কীভাবে প্রভাব ফেলবে?
কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)-এর বিচারপতি সুদীপ্ত দাশগুপ্ত এই ব্যাপারে জানিয়েছেন যে, “২০১৬ সালে যারা পরীক্ষার্থী ছিল তারা যদি সেই সময়ে বয়সসীমার মধ্যে থেকে থাকেন এবং যথার্থ প্রমাণ থাকে তাহলে অসুবিধা নেই। ২০২৪ এ এসে যদি তাঁদের বয়স পেরিয়েও যায় তাহলেও কোন বাধা নেই। ২০১৬ সালের বয়স হিসেবেই এই নির্দেশ বলবৎ থাকবে।”