Higher Secondary: উচ্চ মাধ্যমিকে নতুন বিষয় নির্বাচনের জন্য কোন বিষয়ে কত নম্বর প্রয়োজন? জানিয়ে দিল শিক্ষা সংসদ
উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠক্রমে (Higher Secondary Syllabus) চলতি বছর থেকেই বড়সড় এক পরিবর্তন আসতে চলেছে। নতুন শিক্ষাবর্ষ থেকে পড়ুয়ারা আর আগের নিয়মে পরীক্ষা দেবে না। চলতি বছর থেকে চালু হচ্ছে সেমিস্টার (Semester) ব্যবস্থা। এর পাশাপাশি জাতীয় শিক্ষানীতি মেনে একাধিক নতুন বিষয়ের সঙ্গে কৃত্রিম মেধা যোগ হচ্ছে। উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ অনুমোদিত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বৃত্তিমূলক পাঠক্রমে অনেকগুলি নতুন বিষয় যোগ করা হচ্ছে।
এই বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়ে শিক্ষা সংসদের (WBCHSE) তরফ থেকে এর আগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল। গত ২ মে তারিখে মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার পর সংসদের তরফ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠক্রমের পরিবর্তন সংক্রান্ত বিষয়ে ৪ টি নোটিশ প্রকাশ করা হয়।
এরমধ্যে জানানো হয়েছে, মাধ্যমিকের কোন কোন বিষয়গুলিতে সর্বোচ্চ বা ন্যূনতম কত নম্বর থাকলে তবেই উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে একাধিক ‘সাবজেক্ট কম্বিনেশন’ করতে পারবে পড়ুয়ারা। এই বিষয়টি সম্পর্কেও সংসদের তরফ থেকে জানানো হয়েছে। কিন্তু সংসদের হঠাৎ এমন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশে বিপাকে পড়েছে রাজ্যের একাধিক স্কুলগুলি।
সংসদের প্রকাশিত সেই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে এবারের নতুন পাঠ্যক্রমে পড়ুয়াদের নতুন একটি সুযোগ দেওয়া হবে। প্রথম এবং দ্বিতীয় ভাষা ছাড়া মোট তিনটি ‘সেট’ থেকে তারা নিজেদের পছন্দমত ঐচ্ছিক বিষয় নির্বাচন করতে পারবে। তবে কিছু অপশন দেওয়া থাকবে সে অপশনের মধ্যে থাকবে প্রথম সেট-এ ফিজ়িক্স অথবা নিউট্রিশন, অর্থনীতি বা নৃতত্ত্ব, রসায়ন অথবা ভূগোল, অথবা সায়েন্স অফ ওয়েল বিয়িং-এর মতো নানা একাধিক ‘সাবজেক্ট কম্বিনেশন’। দ্বিতীয় সেট-এ যে বিষয়গুলি থাকবে সে গুলি হল, অ্যাকাউন্ট্যান্সি, অর্থনীতি বা সায়েন্স অফ ওয়েল বিয়িং বা অ্যাপ্লায়েড আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, বিজ়নেস স্টাডিজ় এই বিষয়গুলি।
এর পরবর্তী তৃতীয় সেট-এ থাকবে পলিটিক্যাল সায়েন্স বা বায়োলজিক্যাল সায়েন্স, এডুকেশন বা নিউট্রিশন বা এরকম একাধিক ‘সাবজেক্ট কম্বিনেশন’। এর মধ্যে যদি কোন পড়ুয়া মাধ্যমিক দেওয়ার পর একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীতে বায়োলজিক্যাল সায়েন্স পড়তে চায় তাহলে তার জন্য তাকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় জীবনবিজ্ঞান বিষয়ে কম করে ৩৫ শতাংশ নম্বর পেতে হবে।
একই নিয়মে অন্যান্য বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে যেমন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, কম্পিউটার সায়েন্স, কস্টিং অ্যান্ড ট্যাক্সেশন, অ্যাকাউন্ট্যান্সি, ডেটা সায়েন্স, সাইবার সিকিউরিটি, স্ট্যাটিস্টিক্স এবং অঙ্ক পড়তে চাইলে, পড়ুয়াদের মাধ্যমিক পরীক্ষায় অঙ্কে কম করে ৩৫ শতাংশ নম্বর তুলতে হবে।
আবার পদার্থবিদ্যা এবং রসায়নে পড়ার জন্য মাধ্যমিকে ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ে কম করে ৩৫ শতাংশ থাকতে হবে। একই রকম ভাবে কোন পড়ুয়া যদি তার সাবজেক্ট কমিনেশন-এ ভূগোল বিষয় রাখতে যায় তাহলে তার জন্যও তাকে মাধ্যমিকে ভূগোল বিষয়ে কম করে ৩৫ শতাংশ নম্বর তুলতে হবে।
এই বিষয় সম্পর্কে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সেক্রেটারি প্রিয়দর্শিনী মল্লিক বলেন, “উচ্চ মাধ্যমিকে কিছু কিছু বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে অঙ্ক বা অন্যান্য বিষয়ে ন্যূনতম জ্ঞান থাকা প্রয়োজনীয়। যাতে পড়াশোনার গুণমান বজায় থাকে, সে জন্যই এই পদক্ষেপ করা হয়েছে। এর ফলে যেমন ভবিষ্যতের জন্য পড়ুয়াদের কর্মদক্ষ করে তোলা সম্ভব হবে। তেমনি পড়ুয়ারাও আগেভাগেই সেই বিষয় সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা তৈরি করতে পারবে। জাতীয় শিক্ষানীতি মেনে যথা সম্ভব ইন্টারডিসিপ্লিনারি ‘সাবজেক্ট কম্বিনেশন’ তৈরি করা হয়েছে। যাতে কেউ অঙ্কের পাশাপাশি সংস্কৃত বা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পাশাপাশি জীববিদ্যার মতো বিষয় পড়তে পারে। সেই জন্যই বিভিন্ন ‘সেট’ তৈরি করা হয়েছে। পাশাপাশি, ছাত্রছাত্রীদের সুবিধার কথা ভেবে কিছু ‘অ্যামালগামেটেড’ বিষয়ও রাখা হয়েছে। যাতে বিভিন্ন জটিল বিষয়কে সরলীকৃত ভাবে পড়ুয়াদের কাছে নিয়ে যাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ— অ্যাপ্লায়েড আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এর কথা বলা যেতে পারে। সংসদের সঙ্গে স্কুলগুলি সব সময় যোগাযোগে রয়েছে। এই বিষয়গুলি যে হেতু স্কুলের বিভিন্ন বিষয়ের বর্তমান শিক্ষকরাই পড়াতে পারবেন, তাই ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হলেও এ ক্ষেত্রে কোনও অসুবিধা হবে না।”
আবার এই একই বিষয়ে কলেজিয়াম অফ অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেস-এর সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস ভিন্নমত পোষণ করে বলেছেন, “সংসদের সিদ্ধান্তে দেরির জন্য স্কুলগুলি শুধু অপ্রস্তুতই নয়, পড়ুয়াদের অভিভাবকরাও বিরক্ত। এই সমস্ত সিদ্ধান্ত এবং সংশোধনী বিজ্ঞপ্তি অনেক আগেই ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা উচিত ছিল সংসদের।”
চলতি বছর এপ্রিল মাসেই সংসদের তরফ থেকে নয়া সাবজেক্ট কম্বিনেশন সংক্রান্ত বিষয়গুলি অবগত করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল। তবে এই বিষয়টি সম্পর্কে পুরোপুরি ক্লিয়ার করে কিছু বলা হয়নি যেমন প্রতি সেটে কোন কোন বিষয় থাকবে বা কোন বিষয়ের নির্বাচনের জন্য মাধ্যমিকে একজন প্রার্থীকে পড়ুয়া কে কত নম্বর তুলতে হবে এই বিষয়ে ওই অফিশিয়াল নোটিশে তেমনভাবে কোন তথ্য দেওয়া হয়নি।
ইতিমধ্যে মাধ্যমিকের ফলাফল (Madhyamik Result) প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে একাধিক স্কুলে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। আবার সংসদের প্রকাশিত আগের বিজ্ঞপ্তি অনুসারে আগের বিজ্ঞপ্তি অনুসারে একাধিক স্কুলে লিফলেটও ছাপানো হয়ে গিয়েছে। আর তার পরবর্তীতে সংসদের নতুন এই বিজ্ঞপ্তিকে ঘিরে অনেক জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।
বর্তমানে জটিল পরিস্থিতিতে সমস্যার মধ্যে পড়েছে একাধিক স্কুলগুলো। এই বিষয়ে বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল জানান যে, “এ বছর অনেক মৌলিক পরিবর্তন এনেছে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। এর মধ্যে অন্যতম হল ‘সাবজেক্ট কম্বিনেশন’। এর মধ্যে আমরা লক্ষ্য করলাম, সরকারের লোক দেখানো বিকল্প শিক্ষানীতিকে পাশে সরিয়ে রেখে কেন্দ্রীয় সরকারের নয়া শিক্ষানীতিকে অনুসরণ করা হয়েছে। এতে ছাত্রছাত্রীদের কতটা লাভ হবে, সেটা সময় বলতে পারবে। কিন্তু প্রশ্ন হল, কেন্দ্রের নীতিকে এ ভাবে অনুকরণ করা হচ্ছে কেন? সরকার কেন্দ্রের শিক্ষা নীতি মানবে না বলেই তো বিকল্প শিক্ষা নীতি তৈরি করেছিল!”