WB HS Exam: এবার ২ বার দিতে হবে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা! সংসদের দেওয়া নতুন নিয়ম জেনে নিন
WB HS Exam: উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার (Higher Secondary Exam) নিয়মে হল পরিবর্তন। এর আগে পর্যন্ত নিয়ম ছিল দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীরা অ্যাডমিট কার্ড নিয়ে ১ বার অন্য স্কুলে পরীক্ষা দিতে যেত । বর্তমানে নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষার্থীদের বছরের দুবার অন্য স্কুলে গিয়ে দিতে হবে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা।
পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ (West Bengal Council of Higher Secondary Education), জাতীয় শিক্ষানীতি অনুসারে, একাদশ ও দ্বাদশের পাঠ্যক্রমে চারটি সেমিস্টার চালু করেছে। যে সকল পরীক্ষার্থী এবার ২০২৪ এর মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে একাদশ শ্রেণীতে অ্যাডমিশন নেবে তারা সেমিস্টার সিস্টেমে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীতে পরীক্ষা দেবে।
চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি পদে আসীন হওয়ার পর থেকেই সর্বভারতীয় স্তরে সামঞ্জস্যের কথা স্মরণে রেখে তিনি বছরে দুবার পরীক্ষা অর্থাৎ সেমিস্টার সিস্টেমের কথা বলেন।
এরপরই এই বিষয়টি নিয়ে সংসদের তরফ থেকে গঠিত হয় একটি কমিটি। উক্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠক্রমে সেমিস্টার সিস্টেম চালু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সংসদ। গত বৃহস্পতিবার একটি সাংবাদিক সম্মেলনে সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য এই বিষয়টি সম্পর্কে জানান।
আরও পড়ুন👉: প্রাইমারী শিক্ষক নিয়োগে B.Ed মামলায় গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের! জানুন বিস্তারিত
উচ্চমাধ্যমিকে নিয়মের কি কি পরিবর্তন হল:
১. একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণী মোট চারটি সেমিস্টারে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। একাদশ শ্রেণীতে অনুষ্ঠিত দুটি সেমিস্টার পরীক্ষা হবে পড়ুয়াদের স্কুলে এবং দ্বাদশ শ্রেণীতে দুটি সেমিস্টারের পরীক্ষার আয়োজন করবে পর্ষদ। শেষ দুটি সেমিস্টারের ওপর ভিত্তি করেই মূল্যায়ন করা হবে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল। বাকি দুটি সেমিস্টারের ফলাফল এই মূল্যায়নের উপর প্রভাব ফেলবে না।
২. একাদশ শ্রেণীতে অনুষ্ঠিত দুটি সেমিস্টার প্রথম এবং দ্বিতীয় সেমিস্টার বলে বিবেচিত হবে। দ্বাদশ শ্রেণীতে অনুষ্ঠিত বাকি দুটি সেমিস্টার তৃতীয় এবং চতুর্থ সেমিস্টার বলে গণ্য করা হবে। একাদশ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়ে পড়ুয়ারা যখন দ্বাদশ শ্রেণীতে উঠবে তখন তাদের অ্যাডমিট কার্ড দেওয়া হবে। সেই অ্যাডমিট কার্ড নিয়েই পরীক্ষার্থীদের অন্য স্কুলে গিয়ে তৃতীয় ও চতুর্থ সেমিস্টারের পরীক্ষা দিতে হবে।
আরও পড়ুন👉: কলকাতা পুলিশের অধীনে ডাটা এন্ট্রি অপারেটর নিয়োগ চলছে, রইলো সরাসরি আবেদনের লিংক
৩. একাদশ প্রথম সেমিস্টারের পরীক্ষা হবে নভেম্বর মাসে এবং দ্বিতীয় সেমিস্টার হবে মার্চ মাসে। এবং দ্বাদশ শ্রেণীতে তৃতীয় ও চতুর্থ সেমিস্টারের পরীক্ষা হবে যথাক্রমে নভেম্বর ও মার্চ মাসে। যে সকল পরীক্ষার্থীরা এবার মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে একাদশ শ্রেণীতে অ্যাডমিশন নিতে চলেছে তাদের প্রথম সেমিস্টারের পরীক্ষা হবে নভেম্বর মাসে। তারপর মার্চ মাসে হবে দ্বিতীয় সেমিস্টারের পরীক্ষা। এরপর দ্বাদশ শ্রেণীতে ওঠার পর তাদের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর পরীক্ষা হবে যথাক্রমে নভেম্বর ও মার্চ মাসের।
৪. একাদশ শ্রেণিতে প্রথম সেমিস্টার এবং দ্বাদশ শ্রেণীতে তৃতীয় সেমিস্টারের পরীক্ষায় থাকবে MCQ টাইপের প্রশ্ন। একাদশ শ্রেণীতে প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষা পড়ুয়াদের নিজেদের স্কুলে নেওয়া হবে। তবে দ্বাদশ শ্রেণীতে তৃতীয় সেমিস্টারের পরীক্ষা OMR শীটে দিতে হবে। সেই কাটা দেখা হবে কম্পিউটারের মাধ্যমে। একাদশ শ্রেণীতে দ্বিতীয় সেমিস্টার এবং দ্বাদশ শ্রেণীতে চতুর্থ সেমিস্টারের পরীক্ষায় থাকবে বড় প্রশ্ন।
৫. একাদশ শ্রেণীতে ও দ্বাদশ শ্রেণীতে ১০০ করে মোট ২০০ নাম্বারের পরীক্ষা দিতে হবে পরীক্ষার্থীদের। লিখিত পরীক্ষার প্রজেক্ট বা প্রাকটিক্যাল সবমিলিয়ে থাকবে ১০০ নাম্বার। বিজ্ঞান বিভাগের পড়ুয়াদের ৭০ নাম্বারে লিখিত পরীক্ষা এবং ৩০ নম্বরের প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা হবে। কলা বিভাগের পরীক্ষার্থী যাদের ল্যাবরেটরি নির্ভর পরীক্ষা হবে না, তাদের জন্য ৮০ নাম্বারে লিখিত পরীক্ষা এবং ২০ নাম্বারের প্রজেক্ট থাকবে।
৬. ধরুন কোন পড়ুয়া একাদশ শ্রেণীতে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়েছে। তাহলে সেই পড়ুয়াকে ৭০ নাম্বারে লিখিত পরীক্ষা দিতে হবে। তবে সেই পরীক্ষাটি দিতে হবে দুটি সেমিস্টারে। প্রথম সেমিস্টারে ৩৫ নাম্বারের MCQ টাইপের প্রশ্নে এবং দ্বিতীয় সেমিস্টারে ৩৫ নম্বরের বড় প্রশ্নে। এবার যদি কোন পড়ুয়া কলা বিভাগে ভর্তি হয় অর্থাৎ যাদের কোনো প্র্যাকটিক্যালের বিষয় নেই তাদের দুটি সেমিস্টারের পরীক্ষা নেয়া হবে ৪০ নাম্বারের MCQ এবং ৪০ নম্বরের বড় প্রশ্নে। বছরের শেষে প্রাকটিক্যাল ও প্রজেক্ট এর নাম্বার যোগ করা হবে।
৭. পড়ুয়াদের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় সেমিস্টারের পরীক্ষায় সময় থাকবে ১:৩০ মিনিট এবং চতুর্থ সেমিস্টারের পরীক্ষায় সময় থাকবে ২:০০ ঘণ্টা।
৮. যদি কোন শিক্ষার্থী প্রথম সেমিস্টারের পরীক্ষায় কোন বিষয়ে শূন্য পায় তবে তাকে পরের সেমিস্টারে পাশ নাম্বার তোলার সুযোগ প্রদান করা হবে। একাদশ এবং দ্বাদশ দুই শ্রেণীর পরীক্ষার্থীদের জন্যই এই নিয়মটি ধার্য্য হবে। যদিও সংসদের তরফ থেকে বলা হয়েছে যে, কোন পরীক্ষার্থী যদি লিখিত পরীক্ষায় পাস করা সত্ত্বেও প্রজেক্ট বা প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষায় ফেল করে তবে সেই পরীক্ষার্থীকে ফেল বলে ধরা হবে।
একাংশ শিক্ষক অভিযোগ করছেন যে নতুন সেমিস্টার পদ্ধতিতে কিছু ধোঁয়াশা এখনো থেকেই গিয়েছে। যে কারণে নানা ভুল ভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। অনেক শিক্ষকদের দাবি, যেহেতু প্রথম দুটি সেমিস্টারের দায়িত্ব পড়ুয়াদের স্কুলের হাতেই থাকবে পর্ষদ দায়িত্ব নিচ্ছে না, তাই চারটি সেমিস্টারের সমান গুরুত্ব পাবে না। পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসু এই বিষয়ে জানান, “দুই বছরের পাঠ্যক্রমকে চারটি সিমেস্টারে ভাগ করলে তার চারটি সিমেস্টারই সংসদের তত্ত্বাবধানে হওয়া দরকার। চারটি সিমেস্টারে নম্বর একত্রিত করে উচ্চ মাধ্যমিকের প্রাপ্ত নম্বর ঠিক করা উচিত।”