দাবিদারহীন ৪২ হাজার কোটি টাকা দেশের বিভিন্ন ব্যাঙ্কে পড়ে রয়েছে! সেই বিপুল টাকা কী ভাবে পাওয়া যাবে?
(১/১৪) ভারতের একাধিক রাষ্ট্রায়ত্ত এবং বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলিতে প্রায় ৪২ হাজার ২৭২ কোটি টাকা জমা রয়েছে, যেই অর্থের কোন দাবিদার নেই। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক সূত্রে এমনই খবর পাওয়া গেছে।
(২/১৪) এই বিপুল অর্থের মধ্যে বর্তমানে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির অধীনে রয়েছে ৩৬ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা। আর বাকি ৬,০৮৭ কোটি টাকা বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলির কাছে জমা রয়েছে।
(৩/১৪) দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত এবং বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলিতে ২০১৮-’১৯ অর্থবর্ষের শেষে দাবি আমানত ছিল ১৭,৭৮৪ কোটি টাকা। পরবর্তীকালে এই অর্থের পরিমাণ আরো বৃদ্ধি পায়। কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের একটি রিপোর্ট অনুসারে ২০২৩ সালের ৩১ মার্চ এই অর্থের পরিমাণ এসে দাঁড়ায় ৪২ হাজার ২৭২ কোটি টাকায়।
(৪/১৪) দাবিদারহীন এই আমানতের পরিমাণ কত পাঁচ বছরে অনেক বেশি পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর এই অর্থের পরিমাণ ছিল ৩২ হাজার ৯৩৪ কোটি টাকা। এক বছরে এই অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা।
(৫/১৪) রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (Reserve Bank of India)-র নিয়ম অনুসারে যদি কোন সেভিংস অ্যাকাউন্টে জমা থাকা অর্থে ১০ বছরের মধ্যে কেউ টাকা না তোলে অথবা মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার তারিখের পর থেকে পরবর্তী ১০ বছর পর্যন্ত যদি ওই টাকায় কেউ দাবি না রাখে তবে সেই টাকাগুলি (ফিক্সড ডিপোসিট) ‘আনক্লেমড ডিপোজ়িট’ বা দাবিহীন আমানত হিসাবে চিহ্নিত করা হবে।
আরও পড়ুন: Telegram Income Tips: টেলিগ্রাম থেকে বাড়ি বসেই ইনকাম করুন! রইলো সহজ পদ্ধতি
(৬/১৪) এই বিষয়গুলো শুধুমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত এবং বেসরকারি ব্যাঙ্ক ছাড়াও একাধিক বিদেশি ব্যাঙ্ক, গ্রামীণ ব্যাঙ্ক, সমবায় ব্যাঙ্কের এরকম দাবিহীন টাকার হিসেব রয়েছে দাবিহীন টাকার হিসাব রয়েছে রিজার্ভ ব্যাংকের কাছে।
(৭/১৪) ‘নিউজ় ১৮’-এর একটি প্রতিবেদন অনুসারে জানা গেছে গত ২০০০ সালে ভারতের সমস্ত ব্যাংকগুলিতে প্রায় ৫৩৫ কোটি টাকা ছিল। ২০০২ সালে তার পরিমাণ হয় প্রায় ৬৮০ কোটি টাকা। এই অর্থ দীর্ঘ কয়েক বছরের বৃদ্ধি হয়ে বিপুল পরিমাণে দাঁড়িয়েছে।
(৮/১৪) দেশের সর্ববৃহৎ ব্যাংক স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ায় (State Bank of India) ১৯৯৯ সালে দাবিহীন টাকার পরিমান ছিল প্রায় ১৪৪.২৬ কোটি টাকা। ২০১৩ সালে এই পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে হয় ১,৪৬৯.৯৯ কোটি টাকা।২০১৮ সালে এসে এই টাকার পরিমান ২,১৫৬ কোটি টাকা হয়। আর ২০২০ সালে হয় ৩,৫৭৭ কোটি টাকা।
(৯/১৪) ২০২৩ সালে এস বি আই-এর হাতে এই দাবিদার হীন অর্থের পরিমাণ হয় ৮,০৮৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ ২ দশক মিলিয়ে এই দাবিহীন অর্থের পরিমাণ প্রায় ৫৬ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
আরও পড়ুন: Telegram Income Tips: টেলিগ্রাম থেকে বাড়ি বসেই ইনকাম করুন! রইলো সহজ পদ্ধতি
(১০/১৪) আবার ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতে ২০০০ সালে দাবীহীন অর্থের পরিমাণ ছিল ৪০১.৯৪ কোটি টাকা। ২০১১ সালে এর পরিমাণ হয় ১৯৪৪.৫২ কোটি। আর ২০১৮ সালে তা হয় ৯,০১৯ কোটি। ২০২৩ সালে পুনরায় সেটি বৃদ্ধি পেয়ে হয় ৩৫,০১২ কোটি টাকা। হঠাৎ হিসেব অনুযায়ী গত দুই দশকে ভারতের রাষ্ট্র ব্যাংক গুলিতে দাবিহীন অর্থ প্রায় ৯০গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
(১১/১৪) এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই হাজার হাজার কোটি টাকার অর্থের কোন দাবিদার নেই কেন? এই ব্যাপারে তুমি যার ব্যাংক জানিয়েছে যে, এসব দাবি অর্থের মালিক যারা রয়েছেন তাদের মৃত্যু, অন্য দেশে স্থানান্তর, পারিবারিক বিরোধ, আইনি জটিলতা ইত্যাদি কারণে টাকাগুলি ব্যাংক থেকে তোলা হয়নি ফলে সেইগুলি বহু বছর ধরে দাবিহীন অবস্থায় পড়ে রয়েছে। আবার এই কারণগুলি ছাড়া আরো একাধিক কারণও রয়েছে।
(১২/১৪) এছাড়াও আর বি আই এর মতে গ্রাহকরা তাদের সেভিংস ও কারেন্ট একাউন্ট বন্ধ না করার কারণে সেখানে থাকা টাকা গুলি দাবি অবস্থায় পড়ে থাকে। আর এই অ্যাকাউন্টগুলি বন্ধ না করার কারণে এই দাবিহীন অর্থের পরিমাণ ক্রমশ বেড়েই চলেছে। যেসব অ্যাকাউন্টের গ্রাহকরা মারা গেছেন তাদের নমিনি বা উত্তরাধিকারীরা সেই টাকার দাবি না করায় সেগুলিও জমেছে ব্যাংকে।
(১৩/১৪) প্রতিবছর দেশের প্রত্যেকটি ব্যাংক এই দাবীহীন অর্ধের পরিমাণ আরবিআই (RBI)-এর কাছে জমা করে আর প্রতিবছর এই অর্থের পরিমাণ বেড়ে যায়। জমা করার পর সেই আমানত ‘ডিপোজিটর এডুকেশন অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস (ডিইএ) ফান্ড স্কিম’ তহবিলে স্থানান্তরিত হয়। এটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকে আরবিআই (RBI)।
(১৪/১৪) তবে অ্যাকাউন্টগুলির গ্রাহক অথবা তাদের নমিনি বা উত্তরাধিকারী যদি আইনি প্রমাণ দেখিয়ে সেই টাকার দাবী করে তাহলে তারা চাইলেই সেই টাকা তুলতে পারবে। তার জন্য মূল অর্থের সঙ্গে সুদও প্রদান করা হবে। তবে তার জন্য অবশ্যই আইনি প্রমাণ দেখাতে হবে।